নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে সারা দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলেও সিলেটের জৈন্তাপুরে তেমন পরিবর্তন ঘটে নি। জৈন্তাপুর উপজেলায় অবৈধভাবে বালু, পাথর উত্তোলন, সীমান্ত চোরাচালান, বালু পাথর কোয়ারিতে অবৈধভাবে চাঁদাবাজিতে একটি চক্র বহাল তবিয়তে রয়েছে। এখানে শুধু ব্যক্তি বদল হয়ে সম্মুখ সারিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই চক্রের সাথে রয়েছে পুরনো আওয়ামী সিন্ডিকেট। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দোহাই ও রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অবৈধ কারবারিদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সরকার পরিবর্তনের পরে জৈন্তাপুরবাসী হয়তো আশায় ছিল এই চিত্রের পরিবর্তন হবে। কিন্তু এই লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজির চিত্র পরিবর্তন হয়নি বরং এই নতুনদের সাথে পুরাতন অবৈধ আওয়ামী সুবিধাভোগিরা যোগ দিয়েছে। লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজিসহ এ সকল বিষয়ে সিলেটের স্থানীয় ও জাতীয় অনেক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো সুরাহা হয়নি।
এই অন্তভর্তিকালীন সময়ে জৈন্তাপুরে আওয়ামীলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পূনর্বাসন করছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। ৫ই আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যান তবে ব্যতিক্রম শুধু সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার রাজনীতির চিত্র। বিগত ৬ নভেম্বর একটি সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আঁতাত ও সমঝোতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এই উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের সাথে সখ্যতার কারনে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বহাল তবিয়তে রয়েছেন৷ গত মঙ্গলবার ১৭ই ডিসেম্বর কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১নং নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে দুপুর ১টার সময় জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ, ১নং নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্তাজ আলী, জৈন্তাপুর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব ইমাম উদ্দিন, কৃষকলীগের জেলার নেতা নুরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগ জয়নাল আবেদীন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমীর উদ্দিন প্রমুখ।
সমঝোতা বৈঠকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ কে সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আনোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, সভাপতি হিসেবে আব্দুল হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে নয়, আওয়ামীলীগ নেতা আমীর উদ্দিন কে প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা কৃষকলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সমঝোতা বৈঠক ও ভাগ বাটোয়ারার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। আওয়ামীলীগকে পূনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। যুবদল নেতা হাসিম ও ইন্তাজ চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অবৈধ কারবারের বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন জানালে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, কেন্দ্র থেকে যুবদলের একটি টিম যুবদলনেতা হাসিম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে গিয়েছেন৷ তাঁরা অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে সত্যতা পাননি। ইন্তাজ আলী চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তিনি এসব বিষয় অস্বীকার করেন। বিগত দিনে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই হানিফ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, এটা দোষের কিছু নয়৷
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশীদ চেয়ারম্যান বলেন, আমি বৈঠকের বিষয়টি শুনেছি, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। তাঁরা আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা বা ভাগ বাটোয়ারার ঘটনার শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরা এ সব বিষয়ে জেলার নেতৃবৃন্দকে অবহিত করবো ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply